Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ২৮ August ২০২২

রূপকল্প, অভিলক্ষ্য ও পরিকল্পনা

অবতরণিকা

মেরিটাইম বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপমহাদেশে সবার আগে দেশের জন্য নিজস্ব সমুদ্র এলাকা দাবী করেন। তার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমুদ্র বিজয়ের মাধ্যমে মেরিটাইম বাংলাদেশের প্রকৃত যাত্রা শুরু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে দেশের তৃতীয় সমুদ্র বন্দর হিসেবে পায়রা বন্দরের যাত্রা শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে বহিঃনোঙ্গরে ক্লিংকার, সার ও অন্যান্য বাল্ক পণ্যবাহী জাহাজ আনয়ন ও লাইটারেজ কার্যক্রমের মাধ্যমে সীমিত আকারে বন্দরটি চালু করা হয়। তবে দ্রূততার সাথে দেশের অভ্যন্তরে পরিবহণের জন্য নৌপথ চিহ্নিত করে ফেয়ারওয়ে ও মুরিং বয়া স্থাপন, যোগাযোগের জন্য Very High Frequency (VHF) বেইজ ষ্টেশনসহ যন্ত্রপাতি স্থাপন এবং কাস্টমস ও শিপিং সুবিধাদি চালু করা হয়। একইসাথে ‘ইন্টারন্যাশনাল এ্যাসোসিয়েশন অব পোর্টস এন্ড হারবার’ এর চাহিদা মোতাবেক বন্দরের চ্যানেল ও বহিঃনোঙ্গরের নিরাপত্তার জন্য International Ship and Port Facility Security (ISPS) কোড বাস্তবায়ন এবং জাতিসংঘ হতে ইউএন লোকেটর কোড বরাদ্দ নেয়া হয়। এছাড়া বন্দরটি পূর্ণাঙ্গরূপে চালু করার জন্য দুইটি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ হাতে নেয়া হয়। 

 

পায়রা বন্দরের রূপকল্প

পায়রা বন্দরকে একটি আধুনিক, লাভজনক,ব্যবসাবান্ধব ও নিরাপদ বন্দর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা।

 

পায়রা বন্দরের অভিলক্ষ্য

  • সেবা গ্রহীতাদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদান;
  • বন্দরের পরিচালন ব্যয় সাশ্রয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন;
  • পরিবেশবান্ধব সরঞ্জামাদি ব্যবহারের মাধ্যমে বন্দরের অপারেশান কার্যক্রম পরিচালনা;

চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা

পায়রা বন্দরটি পূর্ণাঙ্গভাবে প্রতিষ্ঠার জন্য যুক্তরাজ্য ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এইচআর ওয়েলিংফোর্ড কর্তৃক Feasibility Study সম্পন্ন করা হয়। উক্ত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রণীত প্রতিবেদনে বন্দরটি বাস্তবায়নের সুবিধার্থে বন্দরের সকল কার্যক্রমকে ১৯টি কম্পোনেন্টে বিভাজন করা হয়েছে। তন্মধ্যে ১২টি কম্পোনেন্ট নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও ৭টি কম্পোনেন্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে এবং সেই অনুযায়ী ধাপে ধাপে বন্দরটি পূর্ণাঙ্গরুপে গড়ে তোলার কাজ চলমান রয়েছে। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে গৃহীত “পায়রা বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার  লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো/ সুবিধাদির উন্নয়ন (DISF)(দ্বিতীয় সংশোধিত)” উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৬,৫৬২ একর ভূমির মধ্যে ৩,৮৯৫.০৪ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ৪ লেন বিশিষ্ট ৫.২২৩ কিলোমিটার শেখ হাসিনা সংযোগ সড়ক নির্মাণ, অভ্যন্তরীণ নৌরুটে ড্রেজিং, আমদানীকৃত পণ্য সংরক্ষণের জন্য ১,০০,০০০ বর্গফুট এরিয়া বিশিষ্ট একটি ওয়্যারহাউজ নির্মাণ, ৬ তলা বিশিষ্ট একটি প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ এবং বন্দরের অপারেশনাল কার্য পরিচালনার জন্য ৭টি জাহাজ নির্মাণ সম্পন্ন করা হয়েছে। একইসাথে ভূমি অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য ৩,৪২৩ টি বাড়ি নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির  ৪,২০০ সদস্যের জন্য বিভিন্ন পেশাগত প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি রাজস্ব বাজেটের আওতায় লাইটারেজ জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের জন্য বন্দরে ৮০ মিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট একটি জেটি নির্মাণ করা হয়েছে। উক্ত জেটিতে কার্গো হ্যান্ডলিং এর জন্য ৩০ (ত্রিশ) টন ক্ষমতা সম্পন্ন ১টি মোবাইল হাইড্রোলিক ক্রেন, ৫০ (পঞ্চাশ) টন ক্ষমতাসম্পন্ন ১টি টার্মিনাল ট্রাক্টর (ট্রেইলারসহ) সংগ্রহ করা হয়েছে।  এছাড়া বিশ্বখ্যাত জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান Damen হতে বন্দরের জন্য একটি অত্যাধুনিক টাগবোট ক্রয় করা হয়েছে, যা বন্দরে একমাত্র টাগবোট হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে। একই সাথে অফিসার ও স্টাফদের আবাসন নিশ্চিতকরনের জন্য ৫ তলা বিশিষ্ট তিনটি ভবন নির্মাণ, বন্দর ব্যবহারকারীদের অফিস, ব্যাংক, বীমা ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি ৫তলা বিশিষ্ট মাল্টিপারপাস বিল্ডিং নির্মাণ, কর্মকর্তা/কর্মচারীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি মেডিকেল সেন্টার নির্মাণ এবং বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে একটি পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এর সাথে কমার্সিয়াল ভবন, প্রাথমিক বিদ্যালয়, অফিসার্স ক্লাব নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে এবং অধিগ্রহণকৃত  এলাকায় আবাসিক এলাকা, হাসপাতাল, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ইত্যাদি নির্মাণের লক্ষ্যে বন্দরের মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে।

পায়রা বন্দরের প্রশাসনিক ভবন এলাকায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির নেটওয়ার্কের অবকাঠামো স্থাপন করা হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ চালু রাখার জন্য একাধিক ISP হতে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। বন্দরের স্থাপনাসমূহের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য CCTV সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া বন্দরের হাইড্রোগ্রাফিক ডেটা দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণ করার জন্য কেন্দ্রীয় ডেটা ব্যাকআপ সিস্টেম স্থাপন করা হচ্ছে।

 

বন্দরে পূর্ণাঙ্গরূপে বাণিজ্যিক জাহাজ হতে মালামাল হ্যান্ডলিং করার জন্য “পায়রা সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনাল ও আনুষাঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ (PPFT)(প্রথম সংশোধিত)” শীর্ষক প্রকল্প গৃহীত হয়েছে, যার আওতায় আধুনিক মানের ৬৫০ মিটার মূল জেটি এবং ব্যাকআপ ইয়ার্ড (৩,২৫,০০০ বর্গমিটার) নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া টেম্পোরারী সার্ভিস জেটি নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং জেটি সংলগ্ন রাস্তার নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এসব নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে এবং জুন ২০২৩ নাগাদ শেষ হবে বলে আশা করা যায়। এছাড়া উক্ত টার্মিনালের সাথে সংযোগের জন্য পরিকল্পিত ৬.৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ৬-লেন বিশিষ্ট রাস্তা নির্মাণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে; পাশাপাশি আন্ধারমানিক নদীর উপর ১.১২ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে ঠিকাদার নির্বাচনের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। এসব কাজ শেষ হলে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার সাথে বন্দরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হবে।

ইতোমধ্যে বন্দরে ২৩৬টি বিদেশী সমুদ্রগামী জাহাজ এবং ৫৭০টি দেশীয় লাইটারেজ জাহাজের  পণ্য হ্যান্ডলিং করার মাধ্যমে পায়রা বন্দর প্রায় ১৮  কোটি টাকা এবং সরকার রাজস্ব খাতে প্রায় ৫৩০.০০ কোটি টাকা (ভ্যাট সহ) আয় করেছে। জাহাজ  চলাচল নিশ্চিত করার জন্য চ্যানেলের গভীরতা -৬.৩ মি: সিডি বজায় রাখার লক্ষ্যে “রাবনাবাদ চ্যানেলের (ইনার ও আউটার চ্যানেল) জরুরি রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে ২৫-৩০ হাজার Deadweight tonnage (DWT) বহন ক্ষমতা সম্পন্ন জাহাজ পায়রা বন্দরে প্রবেশের সক্ষমতা অর্জন করেছে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ বিনিয়োগ সংক্রান্ত তহবিল Bangladesh Infrastructure Development Fund (BIDF) এর মাধ্যমে স্কিমের আওতায়  গত ১৩ জুন ২০২১ তারিখে Jan De Nul (JDN) এর সাথে একটি ড্রেজিং চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ক্যাপিটাল ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ফলে চ্যানেলের গভীরতা বৃদ্ধি পেয়ে ৪০-৫০ হাজার DWT ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন বাণিজ্যিক জাহাজ পায়রা বন্দর প্রবেশ করতে সক্ষম হবে। এসব কর্মকান্ডের মাধ্যমে বন্দরটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে ব্যাপক প্রসার ঘটবে এবং অর্থনীতিতে নতুন দিগন্তের সূচনা ঘটবে। বন্দরটিকে ঘিরে এ অঞ্চলে নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে, অবকাঠামো উন্নয়ন হবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের বিপুল প্রসার ঘটবে। এর ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং সার্বিকভাবে বন্দরের কর্মকান্ডের সুফল সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে। ধারনা করা যায় যে, এ বন্দর প্রতিষ্ঠার ফলে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে যে গতি সঞ্চার হবে তাতে দেশের জিডিপি প্রায় ২% বৃদ্ধি পাবে। ফলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গঠনের পথে দেশ এগিয়ে যাবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্ত ও দারিদ্র্যমুক্ত সুখী সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ গড়ায় এ বন্দর বিশেষ ভূমিকা রাখবে।